স্টাফ রিপোর্টার: মরক্কো ২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে। কিন্তু দেশটির তরুণরা বলছে, এ মুহূর্তে তাদের স্টেডিয়াম নয়, হাসপাতাল, স্কুল ও সাশ্রয়ী জীবনযাপনের ব্যবস্থাই বেশি প্রয়োজন। এই মৌলিক চাহিদার দাবিতেই তরুণদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মরক্কো। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কিছু স্থানে সহিংসতায় নিহত হয়েছে তিন বিক্ষোভকারী। দেশটির সরকারি মুখপাত্র রাশিদ এল খালফি জানান, এখন পর্যন্ত ৪০৯ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভে ২৬০ জন পুলিশ সদস্য ও ২০ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। সহিংসতায় ৪০টি পুলিশের ও ২০টি ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়ে গেছে। গত শনিবার থেকে দেশজুড়ে প্রতিদিন রাতে এ দাবিতে তরুণ-তরুণীরা রাস্তায় নেমে আসছে। তাদের মতে, ১ লাখ ১৫ হাজার আসনবিশিষ্ট স্টেডিয়ামসহ অবকাঠামোতে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। এটি সরকারের ভুল অগ্রাধিকারের প্রতীক।
জেনজি ২১২’ নামে একটি গ্রুপ ডিসকর্ড, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতো বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে এ বিক্ষোভ সমন্বয় করছে। ২১২ সংখ্যাটি মরক্কোর আন্তর্জাতিক টেলিফোন ডায়ালিং কোড। সেটিকে বিক্ষোভ সমন্বয়কারীরা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছে।বেল হাসান নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক বলেন, ‘আমি প্রতিবাদ করছি, কারণ আমি চাই আমার দেশ আরো ভালো হোক। আমি মরক্কো ছেড়ে যেতে চাই না, কিন্তু থাকতে গিয়ে যেন নিজের দেশকে ঘৃণা করতে না হয়। সম্প্রতি নেপালের জেনজি প্রজন্মের আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত মরক্কোর এ তরুণরা দাবি করছেন, সরকার বিশ্বকাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে যে মনোযোগ দেখাচ্ছে—স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবিকাসংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর প্রতিও একইভাবে জরুরি গুরুত্ব দিতে হবে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মরক্কোর ১০টি শহরে একযোগে প্রতিবাদের মাধ্যমে শুরু হয় এ আন্দোলন। সপ্তাহজুড়ে চলা বিক্ষোভ আরো বিস্তৃত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘বিশ্বকাপ নয়, আগে স্বাস্থ্যসেবা চাই’, ‘আমরা চাই হাসপাতাল, ফুটবল স্টেডিয়াম নয়।
বৃহস্পতিবার মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখানুশ ঘোষণা করেন, তরুণদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তিনি প্রস্তুত এবং তার দরজা খোলা। কিন্তু তরুণদের এ আন্দোলনে কোনো নির্দিষ্ট নেতা নেই। তারা বলেছেন, ‘বাস্তব পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আমরা পিছু হটব না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবিগুলো হলো সবার জন্য বিনামূল্যে মানসম্মত শিক্ষা, সব নাগরিকের জন্য সহজলভ্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, সম্মানজনক ও সাশ্রয়ী বাসস্থান, উন্নত গণপরিবহন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমানো ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে ভর্তুকি প্রদান, শ্রমের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত ও পেনশন বৃদ্ধি, তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব হ্রাস এবং ফরাসির পরিবর্তে ইংরেজিকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ।
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি মরক্কোর দক্ষিণাঞ্চলীয় আগাদির শহরের একটি হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে কয়েক দিনের ব্যবধানে আট নারীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দেশটির তরুণরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করে। ধারণা করা হচ্ছে, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও কর্মীর অভাবে এসব নারীর মৃত্যু হয়েছে। মরক্কোতে এর আগেও ২০১১ ও ২০১৬ সালে তরুণদের নেতৃত্বে আন্দোলন হয়েছে। ২০১১ সালের ঘটনাগুলো ছিল বৃহত্তর আরব বসন্তের অংশ, যার ফলে দেশটির সংবিধান সংস্কার করা হয় এবং রাজার কিছু নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত হয়। তবে রাজা এখনো রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী ও ধর্মীয় বিষয়ে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব রাখেন এবং প্রয়োজনে মন্ত্রী নিয়োগ বা অপসারণ করতে পারেন।৮ম পাতা৮ম পাতা৮ম পাতা
Posted ১০:০০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
দৈনিক গণবার্তা | Gano Barta